বহুল আলোচিত বগুড়া সদর থানা এলাকায় মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জনৈক মোঃ লিটনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর মামলার দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক প্রধান আসামি মোঃ মোমিনসহ মোট চারজন কুখ্যাত খুনিকে রাজধানীর মতিঝিল এবং ওয়ারী এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‌্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন হত্যাকান্ডের দীর্ঘদিন যাবৎ আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনপূর্বক হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল ঢাকা মহানগরীর মতিঝিল ও ওয়ারী এলাকা থেকে বহুল আলোচিত ২০২২ সালে বগুড়া সদর থানা এলাকায় মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে লিটনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর মামলার দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক প্রধান আসামি ১। মোঃ মোমিন (২৭), পিতা-মোঃ সোলাইমান, ২। মোঃ তৈয়ব (২৯), ৩। মোঃ তানজিল (২৮) এবং ৪। মোঃ রাহুল (২০), সর্বপিতা-মোঃ বকুল প্রামানিক, সাং-ছোট কুমিড়া, থানা-বগুড়া সদর, জেলা-বগুড়াদেরকে ০৯/০৩/২০২৩ তারিখ গভীর রাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামিরা জানায় যে, ধৃত আসামিদের মধ্যে তৈয়ব, তানজিল ও রাহুল তিন আপন ভাই এবং ধৃত মোমিন তাদের আপন মামা। এছাড়াও ভিকটিম লিটন একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করত। ধৃত আসামিরা বগুড়ার সদর এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। ধৃত রাহুল উক্ত এলাকায় মাদক বিক্রয় করার সময় তাদের পাশের বাড়িতে বসবাসরত সালমান মাদক বিক্রয় করতে বাধা প্রদান করে। এ নিয়ে সালমান ও ধৃত রাহুলের মধ্যে একটি বিরোধের সৃষ্টি হয়। উক্ত বিরোধের জেরে গত ১৬/০৭/২০২২ তারিখ সকাল ১১০০ ঘটিকার দিকে ধৃত রাহুল এবং সালমান পরস্পর বাকবিতন্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে পাশের বাড়ির বাসিন্দা ভিকটিম লিটন ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়। উল্লেখ্য যে, ভিকটিম লিটনও পূর্ব হতে তাদের মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে আসছিল যার জন্য উক্ত মামলার প্রধান আসামি ধৃত মোমিনের সাথে তার বিরোধ চলে আসছিল। পরবর্তীতে ধৃত রাহুল ভিকটিম লিটন ও সালমানকে শায়েস্তা করার জন্য তার দুই ভাই তৈয়ব ও তানজিল, তার মামা মোমিন, নানা সোলাইমান, খালা রিতা বেগম এবং খালাত ভাই রাব্বিসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে ডাক দিলে তারা বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, লোহার রড, ধারালো চাকু, ধারালো হাসুয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ভিকটিম লিটনের বাড়িতে হামলা চালায়। শুরুতেই আসামিরা লিটনের বসতবাড়িতে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থানরত ভিকটিম লিটনের বোন ডলি বেগমকে এলোপাতাড়িভাবে বাশের লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। ধৃত মোমিন তার হাতে থাকা ধারালো দাঁ (হাসুয়া) দিয়ে ভিকটিম লিটনের মাথায় কোপ দিলে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে লিটন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় তানজিল, রাহুল, তৈয়ব, সোলাইমান ও রাব্বি তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে লিটনকে নির্মমভাবে পিটাতে থাকে। সেসময় ভিকটিমকে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভিকটিমের ভাই রাশেদ এবং বোনজামাই আজিজুল এগিয়ে গেলে তাদেরকেও আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। একপর্যায়ে ভিকটিম লিটনের পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে আশেপাশের বসতবাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছালে আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা ভিকটিমসহ জখমপ্রাপ্ত সকলকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম লিটনের অবস্থা আশংকাজনক দেখে তৎক্ষণাত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে ১৭/০৭/২০২২ তারিখ ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম লিটনকে মৃত ঘোষণা করেন। উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচার হলে দেশব্যপী ঘটনাটি নিয়ে ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

 

এই সংক্রান্তে বগুড়া জেলাধীন সদর থানার মামলা নং-৩৪, তারিখ-১৭/০৭/২০২২ রুজু হয়। উক্ত মামলায় মোমিনকে প্রধান আসামি এবং তানজিল, রাহুল, তৈয়ব, সোলাইমান, রাব্বি, রিতা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উক্ত মামলার ৭নং আসামি রিতা বেগমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও অন্যান্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে পলাতক থাকা অবস্থায় ৫নং আসামি সোলাইমান ঘটনার কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করে। গতরাতে র‌্যাব-৩ কর্তৃক ০৪ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং উক্ত মামলার ৬নং আসামি রাব্বি বর্তমানে পলাতক রয়েছে এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চলমান রয়েছে।

ধৃত আসামিরা উক্ত ঘটনার পর নিজ এলাকা হতে পালিয়ে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় আত্মগোপন করে এবং স্থানীয় একটি টেইলার্সের দোকানে  তাদের নাম ও পরিচয় গোপন করে ছদ্ম পরিচয়ে দর্জির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা নিয়মিত তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করত এবং বিভিন্ন মাধ্যমে উক্ত মামলার বাদী ভিকটিম লিটনের বোনকে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল।

ধৃত আসামিরা সকলেই মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়াও তারা বগুড়া সদর এলাকায় চিহ্নিত এবং প্রতিষ্ঠিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা মূলত মাদক ব্যবসা করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। ধৃত মোমিন ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দুইবার মাদকদ্রব্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে ৪৫ দিন এবং ৫১ দিন কারাভোগ করেছে। ধৃত তানজিলের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এবং ধৃত তৈয়ব এর বিরুদ্ধে বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর থানায় ২০০৪ সালের একটি মারামারি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।